যমুনা শপিং মলের একটা শো-রুমে শার্ট দেখছি। একটা শার্ট দেখতে বেশ ভালো লাগছে!  এত দামি শার্ট কেনা যাবে না। আমি এখানে মাঝেমধ্যে আসি ঘুরে ঘুরে দেখি কখনো কেনা হয় না।

এ সময় হুট করে একজন মহিলা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন! আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। মহিলা আমাকে জড়িয়ে ধরিয়ে কাঁদতে শুরু করলেন!

আমার কেমন আনইজি লাগছে! মহিলা আমার মায়ের চেয়েও বয়সে বড় হবে।

মহিলা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলছেন, এতদিন কোথায় ছিলি বাপ? আমার সোনাটা বলেই আমাকে চুমু দিতে শুরু করলেন!

আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম। মহিলা আর কঠিন করে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন!

আমার কেমন খারাপ লাগছে!  এ সময়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি এক আপা হাত জোর করে ক্ষমা চাচ্ছে!

আমি কিছুই বুঝতে পারছি না কী করবো?

মহিলা বললেন,  “এই শার্ট তোর পছন্দ হয়েছে বাবা?”

আমি কিছুই বললাম না। উনি একইরকম কয়েকটা শার্ট নিয়ে কাউন্টারের দিকে গেলেন।

এ সময় আপুটা দ্রুত আমার কাছে এসে বলল, “কিছু মনে করো না ভাই। উনি আমার মা। আমার ছোটো ভাইটা ছাত্র আন্দোলনে মারা গেছে!  ভাইটা দেখতে তোমার মত ছিলো!”

মহিলা আমাকে ইশারায় ডাকছে এদিকে আয় বাবা! আমার এখন কেমন কান্না পাচ্ছে!  মহিলার জন্য মায়া হচ্ছে!

আমি ধীরে ধীরে মহিলার কাছে গেলাম। উনি বললেন,” আর কিছু কিনবি না বাবা? কতদিন তোকে নিয়ে শপিংয়ে বের হই না!”

আমি বললাম, “আজ আর কিছু কিনব না। আরেকদিন।”

মহিলা বললেন, “চল বিরিয়ানি খাই। তোর পছন্দের বিরিয়ানি! “

একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছি।  মহিলা আমাকে বিরিয়ানি খাইয়ে দিচ্ছেন!  আমার একটু লজ্জা লাগছে!  কিছু বলছি না ওনার জন্য কেমন মায়া হচ্ছে।

আমি বললাম, ” আপনি খান।”

মহিলা বললেন,” তুই আমাকে আপনি বলছিস কেন বাবা? আপুর দিকে তাকিয়ে বলল, এই লুনা দেখ বাবু আমাকে আপনি বলছে!”

আপুর চোখে পানি। উনি ভাঙা গলায় বলল, ” মা বাবু এখন বড় হয়েছে না!”

মহিলা বললেন,  “এই আইসক্রিম দাও এখানে।”

রেস্টুরেন্টের একজন বলল, “ম্যাডাম এখানে আইসক্রিম নেই।”

মহিলা ক্ষেপে গেলেন,” কী আমার বাবুর প্রিয় আইসক্রিম নেই?”

আপুটা দ্রুত উঠে গিয়ে ম্যানেজার কে কিছু বললেন,  ম্যানেজার সাথে সাথে জড়ান কন্ঠে বললেন,  “এক্ষুনি দিচ্ছি ম্যাডাম।” বলে চোখ চোখ মুছতে মুছতে দ্রুত বেরিয়ে গেলেন।

খাওয়া শেষ করে বের হয়েছি।  মহিলা আমার হাত ধরে রেখেছেন।  এ সময় গাড়ি থেকে একজন লোক নেমে আসল। আমার সামনে এসে কিছুটা সময় তাকিয়ে রইলেন!  লোকটা মনে হয় লুনা আপার বাবা।

লোকটা বলল, “বাবুকে ছাড় সায়লা। ওকে হলে দিয়ে আসতে হবে।”

উনি লোকটার দিকে তাকিয়ে বলল, “বাবুকে হলে দিলা কবে? আমার বাবু হলে থাকবে কেন! ঢাকায় আমার এত বড় বাড়ি। আমি বাবুকে বাড়িতে রাখব।”

“তুমিও বলেছিলে বাবু ওর নিজের মত থাকবে ভুলে গেছ?”

আমি লোকটার দিকে তাকিয়ে আছি। ওনার চোখের কোনায় জ্বল জমেছে!

লোকটা বলল, “বাবু তো তোমার সাথে দেখা করতে আসবেই! “

“সত্যি আসবি বাবা? এতদিন আসলি না কেন!”

অনেক কষ্টে আমার হাত ছাড়ান হলো। আমি গাড়িতে উঠে বসলাম।  মহিলা কেমন মায়া মায়া চোখে আমার দিকে আছেন। আমার খুব খারাপ লাগছে!

অনেক সময় পরে লোকটা বললেন,  “তোমার নাম কী বাবা?”

“আসিফ।”

“তুমি দেখতে অনেকটা বাবুর মত! লুনা যখন তোমার ছবি পাঠাল। আমি প্রথম দেখে অবাক হয়ে গেছিলাম।  তুমি কিছু মনে করো না বাবা।”

আমি কী বলব বুঝতে পারছি না! এদের কষ্টটা বুঝতে পারছি।

উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “বাবু মারা গেছে আজ চল্লিশ দিন হলো! সায়লা কে সহজে কিছুই খাওয়ান যাচ্ছে না। এতদিন পরে আজ ওর মুখে হাসি দেখলাম। লুনা বলল, আজ নাকি তোমার সাথে খেয়েছে!”

আমি নীরব হয়ে বসে আছি! আমার খুব খারাপ লাগছে!

“তোমার বাসা কোথায় বাবা?”

“যাত্রাবাড়ী।  আপনি আমাকে এখানে নামিয়ে দেন আমি চলে যেতে পারবো।”

উনি কিছুতেই আমাকে নামতে দিলেন না।  গাড়ি চলছে।

অনেকটা সময় পরে উনি বললেন,”  তুমি মাঝে মাঝে সায়লাকে একটু সময় দিতে পারবা? তুমি যখন ফ্রি থাকবা আমাকে ফোন করো আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিবো। আমি ভাবতেই পারছিলাম না সায়লাকে কী করে বাঁচিয়ে রাখবো! আল্লাহ তোমাকে পাঠিয়েছেন! “

বাসার সামনে এসে গাড়ি থামল। আমি নীরবে গাড়ি থেকে নেমে গেলাম।  অনেকটা সময় গাড়িটা থেমে থাকল!

লেখাঃ নাবিল মাহমুদ

Shares: